WASHINGTON BANGLA

মারপিট হৈ-চৈয়ে পণ্ড জর্জিয়া আওয়ামী লীগের সম্মেলন

জর্জিয়া: মারপিট আর হৈ-চৈ’র মধ্যে পণ্ড হয়েছে জর্জিয়া আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এ সম্মেলনে চরমভাবে অপদস্ত হওয়া সত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দের কঠোর সমালোচনা শুরু হচ্ছে বাংলাদেশি কম্যুনিটিতে। প্রকাশ্যে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেওয়ার পাশাপাশি চেয়ার উঁচিয়ে মারতে যাওয়া মাহমুদ রহমানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপের পরিবর্তে উল্টো তাকেই সভাপতি রাখতে ৪ সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সম্মেলনে উপস্থিত থাকা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ।

অর্থাৎ জর্জিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নুরুল তালুকদার নাহিদকে মেনে নিয়ে ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গ্রহণ করা না হলে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। অথচ ঐ নাম ঘোষণার পরই সম্মেলনের নামে কথিত সভায় হট্টগোল শুরু হয়।

চেয়ার উঁচিয়ে মারতে উদ্যত মাহমুদ রহমানকে নিবৃত করার চেষ্টা (মাঝে)। নারী নেত্রীরাও চেষ্টা করেন মারপিট ঠেকাতে (সর্ব ডানে)। ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় সিদ্দিকুর রহমানকে রক্ষায় পাশে দাঁড়ান নেতৃবৃন্দ (সর্ব বামে)।

সাড়ে ৩ বছর আগে ড. সিদ্দিকুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দ আটলান্টায় গিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে জর্জিয়া স্টেট আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির অংশবিশেষ অর্থাৎ সভাপতি, সেক্রেটারিসহ ৫ জনের তালিকা ঘোষণা করেন। সেই ৫ জনের পক্ষে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। তার মধ্যে নতুন এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয় ১২ জুন সন্ধ্যায় আটলান্টাস্থ দুলোতের সনেস্তায় একটি অডিটরিয়ামে। সেখানে অতিথি হিসেবে আরো মঞ্চে উপবেশন করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমান, অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. মোহাম্মদ আলী মানিক, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান এবং আব্দুল হাসিব মামুন, প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম দুলাল মিয়া এবং নির্বাহী সদস্য শাহানারা রহমান।

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে জর্জিয়া স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মাহমুদ রহমানের নাম ঘোষণা করেন ড. সিদ্দিকুর রহমান। সকলে করতালিতে মুখরিত করেন অডিটরিয়াম। এরপর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নুরুল তালুকদার নাহিদের নাম ঘোষণার পরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ঘোষিত সভাপতি মাহমুদ রহমান অকথ্য ভাষায় গালি দিতে দিতে চেয়ার হাতে নিয়ে মারতে যান ড. সিদ্দিকুর রহমানকে। সকলে চেষ্টা করেন তাকে নিবৃত করতে। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি টালমাটাল হয় এবং বিব্রত সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন। এভাবেই পণ্ড হয়ে যায় বহুল প্রত্যাশিত সেই কমিটি গঠনের পরিক্রমা।

এ প্রসঙ্গে মাহমুদ রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সম্মেলনের ৯০% চেয়েছেন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ জামালকে। এতে সম্মতিও ছিল ড. সিদ্দিকের। কিন্তু অজ্ঞাত এক কারণে অন্যজনের নাম ঘোষণাকে কেউই মেনে নিতে পারছিল না। শেখ জামাল হচ্ছেন নিবেদিত সংগঠক আওয়ামী লীগের।

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতির পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণে রহস্যজনক নিরবতায় ক্ষুব্ধ জর্জিয়ার আওয়ামী পরিবার। তারা অভিযোগ করেছেন, বিশেষ কারো পারপাস সার্ভে ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোনো কোনো সংগঠক। তারই ভিকটিম হলো ফ্লোরিডা স্টেট আওয়ামী লীগ, ওয়াশিংটন মেট্র আওয়ামী লীগ এবং সবশেষে জর্জিয়া স্টেট আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ‘এমন অথর্ব নেতৃত্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অবমুক্তি প্রত্যাশা’ করছেন।

জর্জিয়া স্টেট আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের অভিপ্রায়ে সাড়ে ৩ বছর আগে ৫ জনের যে তালিকা ঘোষণা করা হয়েছিল সেখানে ছিলেন সভাপতি কায়সার আহমেদ, সহ-সভাপতি সৈয়দ মুরাদ এবং এইচ আর রাসেল, সেক্রেটারি মাহমুদ রহমান এবং যুগ্ম সম্পাদক নুরুল তালুকদার।

এদিকে, সম্মেলনের নামে কমিটি গঠনের কথিত সভার অপ্রীতিকর পরিস্থিতির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে শাহ সেলিম নামক একজনের ফেসবুকের মাধ্যমে। সেই পোস্টে শাহ সেলিম উল্লেখ করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে যেসব বেয়াদবরা বেয়াদবি করেছে তাদেরকে জর্জিয়া আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হোক, তাকে সভাপতি ঘোষণা করার পরেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাথে বেয়াদবি করেছে । যেহেতু সে সভাপতিত্ব প্রত্যাহার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ডক্টর সিদ্দিকুর রহমান ও নেতৃবৃন্দের প্রতি বিনীত ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি আপনাদের সিদ্ধান্তে অটল থেকে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক নুরুল তালুকদার নাহিদের সাথে নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেওয়া হউক।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.