WASHINGTON BANGLA

নিরবচ্ছিন্নভাবে গুণগত মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার

সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, ঢাকা : একসময় তীব্র বিদ্যুতের সংকট জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং এখন সব নাগরিক চব্বিশ ঘন্টা বিদ্যুতের সরবরাহ পাচ্ছেন। এ লক্ষ্য অর্জনে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। একটি যুক্তিসঙ্গত মূল্যে গুণগত মানসম্পন্ন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে কাজ চলছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আন্তরিক ও নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের প্রতিটি ঘর আজ বিদ্যূতের আলোতে আলোকিত হয়েছে এবং শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।’ তিনি বলেন, বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২০২২ সালের জুন মাসে ২৫,৫৬৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪,৯৪২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে এবং ২৪,৪০৬ মেগাওয়াট স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে।

নসরুল বলেন, সৌরবিদ্যুৎ, বিল (জলাভূমি), চর, পাহাড়ি ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলোকিত করেছে, কারণ সরকার সবাইকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ও চর এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। যে সব এলাকায় গ্রিড সুবিধা নেই সেখানে জায়গায় জায়গায় সাবমেরিন ক্যাবল বসানো হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য। কিছু এলাকা খুব প্রত্যন্ত ছিল, তাই সে সব এলাকার মানুষকে সোলার বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে। এভাবেই বাংলাদেশের শতভাগ জনগনকে বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।’

বিদ্যূৎ, জ্বালানি ও খনিজ স¤দ মন্ত্রণালয়ের অফিস সুত্রে জানা যায, ২০০৯ সালে জনসংখ্যার মাত্র ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতের আওতায় ছিল। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট থেকে ৫৬০ কিলোওয়াট-এ উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুতের বিতরণ ক্ষতি ৫.৮৫% কমেছে। তিনি বলেন, দেশে ৪৯২টি উপজেলা রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৪৬২টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।

পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১৬ অনুযায়ী দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের পথে হেঁটে চলেছে। এই কর্মকর্তা বলেন, আরইবি প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১,০৫৯টি গ্রামকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে এসেছে। ফলে এ সব প্রত্যন্ত গ্রামের দুই লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।

এছাড়া ৯০টি স্থানে নদী পারাপারের লাইন এবং মোট ১৮২ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল লাইন বসাতে হয়েছে। আলাপকালে এক বিদ্যুৎ গ্রাহক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে দেশে সফলভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, গত ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধা রয়েছে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন বাসস’কে বলেন, নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ সাধারণ মানুষের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মান বাড়াবে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ ও স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগকে সফল করা হয়েছে।

হোসেন বলেন, “২০১৬ সালের শুরুর দিকে, ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ প্রকল্পের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকার একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়। তিনি জানান, স্বল্প সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে আরইবি ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ কর্মসূচি চালু করেছে। এছাড়াও তিনটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কাজ করেছে।”

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, মোট ১১৪৬টি প্রত্যন্ত গ্রাম বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ২০১৮ সালে দুর্গম সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কাজ শুরু করে। পিডিবি একটি ১৬-কিলোমিটার দীর্ঘ সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করে এবং সন্দ্বীপ ২০২০ সালে বিদ্যুৎ সংযোগ পায়।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাগুলো এ পর্যন্ত ৪.২৭ কোটি সংযোগ প্রদান করেছে। এভাবে কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করেছে। গত ২১ মার্চ পটুয়াখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ সাফল্যের ঘোষণা দেন। গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুতায়ন স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে এবং এ ধরনের সাফল্যের গল্পই বাংলাদেশের অগ্রগতির কারণ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১০ লক্ষ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি অর্থনীতিতে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা থেকে ১০ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা যোগ করে।

চর এলাকার মানুষের জীবন বদলে দিতে শুরু করেছে বিদ্যুৎ। কয়েক বছর আগেও কৃষিই ছিল তাদের একমাত্র আয়ের উৎস। ঐ সময় এসব এলাকায় অনেক ছোট কারখানা যেমন রাইস মিল, পোল্ট্রি ফার্ম, ছোট ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ গড়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেয়। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে, যা ২৭ থেকে এখন ১৫২তে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাও ৪,৯৪২ মেগাওয়াট থেকে ২৫,৫৬৬ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে।

ট্রান্সমিশন লাইনের ক্ষমতা ৮,০০০ সার্কিট কিলোমিটার থেকে বেড়ে ১৩,৫১৮ হয়েছে এবং বিতরণ লাইন ২,৬০,০০০ কিলোমিটার থেকে ৬,২৬,০০০ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে জাতীয় গ্রিডে ৭৮৮.২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করা হয়েছে। যার মধ্যে সৌর শক্তি ৫৫৪.২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, বায়ুু ২.৯ মেগাওয়াট, হাইড্রো ২৩০ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস ০.৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং বায়োমাস ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

নসরুল হামিদ বলেন, “সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ধীরে ধীরে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে, যা কার্বন নিঃসরণও কমিয়ে দেবে।” তিনি বলেন, সরকার দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করছে এবং এর অংশ হিসেবে, সোলার হোম সিস্টেম দেশের অফ-গ্রিড এলাকায় প্রায় ২ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিববর্ষে শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতির কারণে, বিদ্যুৎ বিভাগকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ প্রদান করা হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.