ডেস্ক রিপোর্টঃ আগামী ২৫ জুন চালু হচ্ছে দেশের ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের এই সেতু দেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী প্রভাব ফেলবে স্বাভাবিকভাবেই। শুরু থেকেই এই পদ্মা সেতু নিয়ে জল কম ঘোল করেনি বিরোধীপক্ষ। ষড়যন্ত্র এখনো চলমান। উন্নয়নের একটি স্তম্ভকে সাধুবাদ না জানিয়ে অনেকেই স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। এসব মিথ্যাচারের জবাব দিয়েছেন রাজনীতিবিদ, বিশ্লেষক, লেখক ও গবেষক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
শুক্রবার (১০ জুন) নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। পদ্মা সেতু নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে বিভিন্ন কথা ছাড়ানো হচ্ছে সেসব বিষয় নিয়েও মোহাম্মদ এ আরাফাত কথা বলেছেন। সময় টেলিভিশনের পাঠকদের জন্য তার বক্তব্য তুলে ধরা হলো-
মোহাম্মদ এ আরাফাত শুরুতেই বলেন, আপনারা সবাই জানেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে কী ধরনের আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং কারা কারা এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল; আমি নতুন করে আর সেসব উল্লেখ করছি না। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা বিশ্ব ব্যাংককে দিয়ে পদ্মা সেতুর বিপক্ষে, শেখ হাসিনা সরকারের বিপক্ষে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। আপনারা এটাও জানেন, সেই দুর্নীতির অভিযোগ, অসত্য-রূপকথার গল্প সেটা কানাডার আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। এই অভিযোগ যখন কানাডার আদালতে টেকেনি, তারপর বিশ্বব্যাংক বিব্রত হয়েছিল। বাংলাদেশের সকল গণমাধ্যমে সেই খবর প্রচারিত হয়েছিল যে, কানাডার আদালত বলেছে, দুর্নীতির যে অভিযোগ বিশ্বব্যাংক করেছিল সেটি একেবারে মিথ্যা, একেবারে গার্বেজ (আবর্জনা)।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে, দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার সরকারকে খাটো করে দেখানোর যে অপচেষ্টা, এর বিপক্ষে কানাডার আদালতের রায়টি যখন চলে আসল এবং তিনি (শেখ হাসিনা) যখন বিজয়ী হলেন তখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার উদ্যোগ নিলেন এবং করে ফেললেন, সেই বাস্তবতায় সেই কুচক্রীমহল এখন নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা এখন বলছে, পদ্মা সেতুতে অনেক বেশি অর্থ খরচ হয়েছে, এখানে দুর্নীতি হয়েছে। আমার কথা হচ্ছে, অনেক বেশি খরচ হয়েছে, কোথায় হয়েছে? কীভাবে হয়েছে? সেই তথ্য কিন্তু তারা দেয়নি।
আরাফাত বলেন, তারা একটি কথা বারবার বলছে, ২০০৭ সালে প্রাথমিক যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল তখন তার বাজেট ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা, এখন এই বাজেট হয়ে গেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। কেউ কেউ আবার বাড়িয়ে বলছে ৪০ হাজার কোটি টাকা, কেউ কেউ বলছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। নির্জলা ডাহা মিথ্যা। সত্যিকার অর্থে পদ্মা সেতুর মোট বাজেট দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। কিন্তু ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমির খসরু মোহাম্মদ চৌধুরীরা বলছেন, ৪০/৫০ হাজার কোটি টাকা। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কোনো তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তারা এটা প্রমাণ করতে পারবে না। কিন্তু এই ৪০ হাজার কোটি টাকা বা ৫০ হাজার কোটি টাকা তারা যখন প্রমাণ করতে পারছে না, তখন তারা বলছে ৩০ হাজার টাকা বেশি, ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে এটা বাড়িয়েছে।
২০০৭ সালে ১০ হাজার কোটি টাকা যখন বাজেট নেয়া হয় তখন টাকার ভ্যালু (মূল্য) কত ছিল ডলারের বিপরীতে? এক ডলারের বিপরীতে টাকার ভ্যালু ছিল ৬৮ টাকা ৬৫ পয়সা। পরবর্তীতে এক ডলারের বিপরীতে টাকার ভ্যালু গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। আপনি চিন্তা করে দেখুন, এই বাজেটটি যখন করা হয় তখন এগুলো কিন্তু ডলারে করা হয় এবং টাকার অংকে প্রকাশ করা হয়। আপনি যদি ২০০৭ সালে ২০০ ডলারের একটি বাজেট করেন টাকার অংকে কত আসে? ৬৮ টাকা ৬৫ পয়সা ধরে ১৩ হাজার ৭৩০ টাকা। কিন্তু যদি এটা বেড়ে যায়, একটি পর্যায়ে এসে টাকার ভ্যালু যদি কমে যায় এবং এটি যদি ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা হয়ে যায়, তাহলে মূল বাজেট ২০০ ডলারও যদি থাকে, তারপরও টাকার অংকে এই বাজেটটি দাঁড়াবে ১৬ হাজার ৯৬০ টাকা। তখন কি আপনি বলবেন ১৩ হাজার ৭৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬ হাজার ৯৬০ টাকা হয়েছে? কিন্তু তা তো বাড়েনি, কারণ ২০০ ডলার তো একই আছে। এখানে টাকার মান কমেছে। তাহলে টাকার ডিভ্যালু (অবমূল্যায়ন) করার জন্য এই সময়টি আমরা কেন পার করলাম? ওই যে ষড়যন্ত্র, অভিযোগ, মিথ্যা অভিযোগ, কানাডার আদালতে মামলা। সব মিলিয়ে এটি তো দেরি করিয়ে দিল তারা। একটি পর্যায়ে এসে এটা ডিভ্যালু হলো। এটা গেল একটি কারণ। যে কারণে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রাথমিক বাজেট বেড়ে গেল।
দ্বিতীয় কারণটি তুলে ধরে আরাফাত বলেন, আপনাদের একটু বলি, প্রাথমিক পর্যায়ে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ৫.৮ কিলোমিটার। পরবর্তীতে এটি ৬.১৫ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। তো এক কিলোমিটার বেড়ে গেল পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য, এখানে খরচ বাড়বে না? এখানে বরাদ্দ বাড়বে না? তারপর আপনারা আসুন, যে পদ্মা সেতু ছিল এক তলা, এখন এটি দুই তলা পদ্মা সেতু হয়েছে। যে পদ্মা সেতুর আপার ডেকে গাড়ি চলবে, লোয়ার ডেকে ট্রেন চলবে। এখানে কি বাজেট বাড়বে না?
প্রাথমিক পর্যায়ে যে পদ্মা সেতুর প্ল্যান করা হয়েছিল, যেটিকে তারা ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু বলে, সেই ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু ভূমি অধিগ্রহণবাবদ চিন্তা করা হয়েছিল যে, টোটাল ২ হাজার ২৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। পরে দেখা গেল, বাস্তবে এসে ৬ হাজার ২৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের যে পরিমাণ তিনগুণ বেড়ে গেল। এছাড়াও ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে যে পয়সা সাধারণ জনগণকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় সেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিনগুণ বাড়িয়ে দিলেন আইন পরিবর্তন করে। তার মানে জনগণকে লাভবান করার জন্যই তো এই খরচটি বাড়ল। এই পয়সা তো জনগণের কাছে গেছে, মানে যাদের কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তার মানে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য যেসব মানুষের কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তাদেরকে তিনগুণ পয়সা দেয়া হয়েছে এবং ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। তাহলে তো খরচ বাড়বেই। বরাদ্দ বাড়বেই।
তারপর প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৪১টি স্প্যানের মধ্যে মাত্র ৩টি স্প্যান উঁচু করে বানানোর পরিকল্পনা ছিল। যাতে করে এর নিচ দিয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করতে পারে। পরবর্তীতে ৪১টি স্প্যানই একই উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এটা কি ফ্রি অব কস্ট হয়ে যাবে? এটার কি খরচ বাড়বে না? বরাদ্দ বাড়বে না? আপনি যদি একটি সেতুর গুণগত মানের উন্নয়ন ঘটাতে চান, আরেকটু উন্নততর করতে চান, আরেকটু বেটার কিছু করতে চান সময়ের সাথে সাথে, পরবর্তীতে চিন্তা করে, তাহলে সেখানে আপনার বরাদ্দ তো বাড়বেই। খরচ তো বাড়বে, এটা তো স্বাভাবিক। তাছাড়া আপনি খেয়াল করে দেখুন, যাদের নদী শাসন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, তারাই এই বোকার স্বর্গে বাস করে এবং অসত্য কথা বলে।
তিনি পদ্মা নদীর খরস্রোতা নিয়ে বলেন, গোটা পৃথিবীতে অ্যামাজানের পরে সবচাইতে খরস্রোতা নদী পদ্মা। দ্বিতীয় আর কোনো নদী নেই। নদী শাসনের জন্য ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। ১৬ কিমি পাড় ধরে নদী শাসন করতে হয়েছে। পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো নদীতে সেতু বানাতে গিয়ে এই কাজটি করতে হয়নি। উদাহরণ দেখাতে পারবেন? অনেক সেতু হয়ে যায় ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকায়। কিন্তু পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে নদী শাসনে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। তাহলে আপনি নদী শাসন কেন করতে হয় কীভাবে করতে হয় এগুলো না বুঝে যদি বোকার মতো প্রশ্ন করেন, বোকা না, আমি বলবো এটা ইচ্ছা করেই তারা এই ধরনের প্রশ্ন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। আপনারা কি জানেন, যে ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুর কথা বলছেন, ১০ হাজার কোটি টাকার মূল পদ্মা সেতু, আপার ডেক ও লোয়ার ডেক মিলে কত টাকা খরচ হয়েছে? মূল পদ্মা সেতু যেটি আপার ডেক (যেখান গাড়ি চলবে), লোয়ার ডেক (যেখানে ট্রেন চলবে), দুটো মিলে মূল সেতু যেটি মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত সংযোগ করবে সেখানে খরচ হয়েছে ১২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। তাহলে খরচ বাড়ল কোথায়? ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুতে খরচ হয়েছে ১২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। বাকি ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে নদী শাসনের জন্য।
এছাড়া আমি যে বিষয়গুলো বললাম, প্রাথমিক ডিজাইনে যেগুলো ছিল না, গ্যাসের লাইন নেয়ার পরিকল্পনা ছিল না, বিদ্যুতের লাইন নেয়ার পরিকল্পনা ছিল না। যেগুলো পরে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যুতের লাইন নেয়ার পরিকল্পনা যখন হলো, সংযুক্ত করা হলো ৭টি নতুন পিলার। এখানে সবগুলো সংযুক্ত করতে হয়েছে আলাদাভাবে। এখানে কিছু কিছু মূর্খ আবির্ভূত হয়েছে এই সমাজে, যারা ভূপেন হাজারিকা সেতুর সাথে এর তুলনা করছে। ভূপেন হাজারিকা সেতু ৯ কিমি, পদ্মা সেতু ৬.১৫ কিমি। কিন্তু ভূপেন হাজারিকা সেতুর যে প্রস্থ (১২ মিটার), পদ্মা সেতুর প্রস্থ তার দ্বিগুণ (১৮.১৮ মিটার), ভূপেন হাজারিকা সেতু এক তলা, পদ্মা সেতু দুই তলা। এখানেই তো পদ্মা সেতু ভূপেন হাজারিকা সেতুর চারগুণ। শুধু তাই না, আপনারা জানেন কি না ভূপেন হাজারিকা সেতুর যে পাইল লোড ক্যাপাসিটি তা ৬০ টন। পদ্মা সেতুর পাইল লোড ক্যাপাসিটি কত জানেন, ৮ হাজার ২০০ টন। কতগুণ বেশি? ভূপেন হাজারিকা সেতুর যে পিলার সেই পিলারের ওজন ১২০ টন, পদ্মা সেতুর একেকটা পিলারের ওজন কত জানেন? ৫০ হাজার টন। ভূপেন হাজারিকা সেতুর সাথে পদ্মা সেতুর তুলনা কেউ করে, যদি না তার একটা দূরভিসন্ধিমূলক কোনো ইল ইনটেনশন থাকে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর পাইল লোড ক্যাপাসিটি আর পিলারের ওজন যদি হিসাব করেন, তাহলে ভূপেন হাজারিকা সেতু থেকে ১৩৩ গুণ ভারি। এই মিথ্যাচার করার পেছনে তাদের মনে অনেক যন্ত্রণা। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংককে দিয়ে মিথ্যাচার করিয়ে কানাডার আদালত থেকে যখন রায় চলে আসলো, একটা মিথ্যাচারও টিকলো না। এখন তারা দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ আনতে পারছে না। তারা এখন বলছে ১০ হাজার কোটি টাকার সেতু ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। কেন হয়েছে সে ব্যাখ্যা তারা দিচ্ছে না। কোথায় কোথায় হয়েছে, সে ব্যাখ্যাও তারা দিচ্ছে না। কেন পদ্মা সেতুতে নদী শাসন প্রয়োজন হয়েছে, সে ব্যাখ্যাও দিচ্ছে না। পদ্মা সেতুর মূল সেতুর খরচ ৩০ হাজার কোটি টাকা নয়, মূল সেতুর খরচ ১২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা, সেটা তারা বলছে না। একটা ভালো জিনিসের ন্যায্য খরচ করে, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কাজটি যে করবেন, তা আপনি এ দেশে করতে পারবেন না। কিছু নিন্দুক এটা নিয়ে কুতর্ক করবে, মিথ্যাচার করবে, সমালোচনা করবে, মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। তাদের যে অন্ধ সমর্থক গোষ্ঠী আছে, তারা তাদের এই মিথ্যাচারকে বিশ্বাস করে। তারা এসব যাচাই করে না। সত্যটা ঘেটে দেখে না। তারা তাদেরকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। ১০ হাজার কোটি টাকার সেতু ৩০ হাজার কোটি টাকা কেন হয়েছে, সেটা তারা জানেই না।
আরাফাত বলেন, ৫.৮ কিলোমিটার সেতু ৬.১৫ কিলোমিটার হয়েছে। ২ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করার কথা, সেটা ৬ হাজারের বেশি হয়েছে। যে ক্ষতিপূরণ জনগণকে দেয়ার কথা তার ৩ গুণ বেশি দেয়া হয়েছে। ৩টি মাত্র পিলারের মাধ্যমে যে উচ্চতার কথা ছিল ৪১টি স্প্যানই সেই উচ্চতায় বসানো হয়েছে। ১৬ কিমি নদী শাসন করতে হয়েছে পদ্মার দুই পাড়ে। পৃথিবীতে কোনো সেতুর ক্ষেত্রে এটি করা হয়নি। এই বিষয়গুলো যদি না বলে শুধু ঐকিক নিয়মে ১০ হাজার কোটি টাকা ৩০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
২০০৭ সালে ডলারের বিপরীতে ১০ হাজার কোটি টাকা কত ছিল আর এখন কত? আমার কথা হচ্ছে, পদ্মা সেতু তৈরি করতে যে দেরি হয়েছে, তার জন্য দায়ী এই ষড়যন্ত্রকারীরা। যারা এটা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। সেটার জন্য তো সরকারের কোনো দোষ নেই। কাজেই এদের যদি নূন্যতম সততা থাকতো, নূন্যতম লজ্জা থাকতো তাহলে এই পদ্মা সেতু নিয়ে এই নির্লজ্জ মিথ্যাচার করত না।
তিনি বলেন, তারা মিথ্যাচার করে ‘নিজস্ব অর্থায়নে নয়, চীন থেকে লোন নিয়ে পদ্মা সেতু করা হয়েছে’। কত বড় মিথ্যাবাদী এরা। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার পুরোটাই বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় পুরো টাকা সেতু মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। সেতু বিভাগ এই টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু করেছে। পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় করে সেতু বিভাগ আগামী ৩৬ বছরে ১ শতাংশ ইন্টারেস্টসহ সেতু মন্ত্রণালয়কে ফেরত দিবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সেই টাকা অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পে খরচ করবে। এভাবেই গোটা বিশ্বের সরকারগুলো চলে এবং প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়। এই বিষয়ে যাদের ক খ গ ঘ নলেজ নাই তারা স্যোশাল মিডিয়াতে আসে, এসে জ্ঞান দেয়। ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন নেতা-নেত্রী এসে মিথ্যাচার করে আর তাদের অন্ধ ভক্তরা সেসব বিশ্বাস করে।
পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ নিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর (মূল সেতুর) দুই পাড়ে রেলের সংযোগ তৈরি করা হয়েছে। এই রেললাইনটি তৈরি করছে রেল মন্ত্রণালয়। পদ্মা সেতু তৈরি করছে সেতু বিভাগ। রেল মন্ত্রণালয় পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে যে রেল সংযোগ তৈরি করছে, সেটি রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা প্রকল্প। সেই প্রকল্পের বাজেট ৪০ হাজার কোটি টাকা। এখানে ২১ হাজার কোটি টাকা চীনের কাছ থেকে লোন নেয়া হয়েছে। সেটি আলাদা প্রকল্প, এটির সাথে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কোনো সম্পর্ক নাই। অথচ এরা এতটাই অজ্ঞ যে, রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাধীন একটি বাজেটের সঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্প মিলিয়ে ফেলে। এ ধরনের মিথ্যাচার তারা সারাক্ষণ করে যাচ্ছে। একটি বিষয় বলবো, যে যার রাজনীতি করুন। যে যার আদর্শ নিয়ে থাকুন। কিন্তু দেশের স্বার্থে-জাতির প্রশ্নে সৎ থাকতে হবে। সত্য কথা বলতে হবে। সত্যের পক্ষে থাকতে হবে এবং যারা মিথ্যাচার করবে সারাক্ষণ, তাদের প্রত্যাখান করতে হবে। কারণ যারা জনগণকে মিথ্যা কথা বলে, তারা তো দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারে না। যাদের নূন্যতম সততা নাই তাদের লজ্জা-শরমও নাই। বারবার মিথ্যাচার করেছে, বারবার ধরা খেয়েছে। কানাডার আদালত সমস্ত মামলা খারিজ করে দিয়েছে, তারপরও এরা মিথ্যাচার করছে।
সবশেষে তিনি বলেন, যদি সত্যিকার অর্থে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কোথাও কোনো দুর্নীতি ধরতে পারেন সেটি আপনারা প্রকাশ করবেন, বলবেন এবং তার মাধ্যমে আপনি দেশের উপকার করছেন। এ ধরনের সমালোচনাগুলো আমরা ইতিবাচক হিসেবে নিতে চাই এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সেক্ষেত্রে অ্যাকশন নিবেন। এর আগেও বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কথা উঠেছে। পর্দার দাম এক লাখ টাকা। বালিশের দাম এক লাখ টাকা। সেসব তথ্য সরকারি আয়-ব্যয় থেকে পেয়েছেন। সরকারি সূত্র থেকে পেয়েছেন। সেগুলো যখন গণমাধ্যমে এসেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে, সাথে সাথে অ্যাকশন নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যে এগুলোর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়েছেন, সে খবরগুলো আপনারা রাখেন না। একটু খবর নেন, দেখবেন যে কতজনের শাস্তি হয়েছে। আমার কথা হচ্ছে, সত্য কথা বললে অ্যাকশন হবে। সেখানে শুধরানো যাবে। দেশের জন্য সেটা মঙ্গলজনক হবে। কিন্তু অসত্য বলে মিথ্যাচার করা, ভূপেন হাজারিকা সেতুর সাথে তুলনা করা। ২০০৭ সালের বাজেটের সাথে ২০২২ সালের বাজেটের তুলনা করা এই ধরনের মিথ্যাচার যারা করে, তাদেরকে প্রত্যাখান করা উচিত। ঝেঁটিয়ে বিদায় করে রাজনৈতিক অঙ্গন বিশুদ্ধ করা উচিত।
- মোহাম্মদ এ আরাফাত, রাজনীতিবিদ, বিশ্লেষক, লেখক ও গবেষক